রিপলিস বিলিভ অর নট-এ বাংলাদেশের রূপকথা
ওয়ান্ডার বয় রূপকথা!
গত ২৫ নভেম্বর রাতে ‘রিপলিস বিলিভ ইন অর নট’ কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বিস্ময়কর শিশু রূপকথাকে তারা চলতি বছরের কার্টুন বইয়ের নতুন সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে রিপলিসের সাইটে গেলে দেখা যায়, রূপকথা কম্পিউটারে কাজ করছে এমন একটি কার্টুন ছবি শোভা পাচ্ছে। Wonder Boy! শিরোনাম দিয়ে ওই কার্টুনটিতে দেখানো হয়েছে—রূপকথা তার স্বভাব ভঙ্গিতে ল্যাপটপে কাজ করছে। কার্টুনের নিচে তার পরিচিতি হিসেবে আছে—Wasik Farhan Roopkotha, from Bangladesh is able to program computer software at the age of 6. এই লিঙ্কে পাওয়া যাবে সেই ছবিটি—www.ripleys.com/weird/videos-and-oddities/ripleys-syndicated-cartoons/cartoon-11-25-2012. রিপলিসের ফেসবুক পেজেও দেখা যাচ্ছে রূপকথার ওই কার্টুন ছবিটি মূল ছবি হিসেবে আছে। এ ঘটনা বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
পরবর্তী সংষ্করণেও রূপকথা
গত বছরের শুরুতে রিপলিস জানিয়েছিল, তাদের নতুন সংস্করণের জন্য রূপকথাকে নির্বাচিত করা হবে। সে মোতাবেক রূপকথার বাবা-মা’র ধারণা ছিল গত সেপ্টেম্বর নাগাদ হয়তো রূপকথা রিপলিসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অবশেষে চলতি বছরের নভেম্বরেই অন্তর্ভুক্ত হলো রূপকথা। তবে আরও সুখবর হলো—রিপলিসের পরবর্তী বইতেও যুক্ত হচ্ছে রূপকথার কার্টুনটি। এ বিষয়ে রিপলিস পাবলিশিংয়ের সিনিয়র রিসার্চার জেমস প্রাউড এক চিঠিতে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে আমরা রূপকথার কার্টুনটি প্রকাশ করেছি। আমাদের পরবর্তী প্রকাশিত বইয়েও বিষয়টি যুক্ত করব এবং সেভাবেই আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
কি এই রিপলিস?
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী স্ব্বীকৃত টিভি শো ‘রিপলিস বিলিভ অর নট’। এটা একটা জনপ্রিয় টিভি প্রোগ্রাম, যাতে বিশ্বের বিস্ময়কর সব ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। মূলত অবাক করা চটকদার ঘটনাই এর মূল বিষয়বস্তু। রবার্ট রিপলি এর প্রতিষ্ঠাতা। এই টিভি শো এক সময় বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর রেডিও, টেলিভিশন, কমিক বই এবং কার্টুনেও এসব ঘটনা নানা আঙ্গিকে উপস্থাপিত হতে থাকে। রিপলির বিনোদনের সম্প্রচার ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে নানা প্রকল্প, সিন্ডিকেটেড টিভি সিরিয়াল, সংবাদপত্র কার্টুন প্যানেল, বই, পোস্টার, গেমস প্রভৃতি। এরই প্রিন্টিং সংস্করণ হলো শিক্ষামূলক যা তারা বিভিন্ন সংস্করণে বই আকারে প্রকাশ করেও বিশ্বে প্রচার করে।
রূপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা জানায়, তারা রূপকথাকে রিপলিস কার্টুন বুকে দেখে খুবই খুশি। এরকম একটি সংবাদের জন্য আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম। এজন্য মহান আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রূপকথার জন্ম ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানে। জন্মের পর ওর বয়স যখন মাত্র কয়েক দিন, তখন সে পিসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। মাত্র ৭ মাস বয়স থেকেই রূপকথা তার বাবার পিসিতে মাউস নিয়ে কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু করে। তার বয়স যখন ১ বছর, তখন তাকে কিছু খাওয়াতে চাইলে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। প্রথমে পিসি অন করতে হতো, এরপর সে তার সামনে বসে খাবার খাওয়া শুরু করত। মাত্র দুই বছরের মাথায় সে এমএস ওয়ার্ডে টাইপিং শুরু করে। তাকে খাবার খাওয়ানো হতো পিসির সামনে বসিয়ে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ছবি দেখিয়ে। ওইটুকু বয়সী বাচ্চার এ আবদার মেটাতে তার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা’কে সবকিছুই করতে হতো।
নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে রূপকথা
রূপকথা তার হাতের ছোট আঙুল দিয়ে না দেখে এত স্পিডে টাইপ করতে পারে যে বিশ্বাস করাই কঠিন। টাইপিং তার কাছে খুব সাধারণ একটি বিষয়। এরই মধ্যে উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্লাশ প্রভৃতিতে তার বেশ পারদর্শিতা হয়ে গেছে। এমএস ওয়ার্ডের ফাইল তৈরি, টেক্সট ডিজাইন, পিকচার অ্যাড, গ্রাফ ও টেবিল ওয়ার্ক, এক্সেল দিয়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ, পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে পিকচার মুভিং অ্যানিমেশন, স্লাইড শো, সাউন্ড ও মিউজিক অ্যাডের কাজ তার কাছে কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ফটোশপে যে কোনো ছবি এডিট করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে। তথ্য পরিবর্তন করে একটি গেমসের চরিত্রকে আরেকটি গেমসে ঢুকিয়ে দিতে পারে অবলীলায়। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন গেমিং সফটওয়্যার সে নিজে ডাউনলোড করে নিজেই ইন্সটল করে। একইভাবে সিডি থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও গেমস সে নিজে নিজেই পিসিতে ইন্সটল করে। হার্ডওয়্যার বিষয়েও তার ভালো জ্ঞান আছে। এই ৫ বছরে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সে যতটুকু পারদর্শিতা অর্জন করেছে বলা যায়, অনেক দক্ষ প্রোগ্রামাররাও তা পারেনি। ৭শ’র অধিক জটিল কম্পিউটার গেমস সে এরই মধ্যে খেলেছে। ফেসবুক ও মাইস্পেসসহ ইন্টারনেটের বেশ কয়েকটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটেও তার অবাধ বিচরণ। ওয়াসিক ফারহান রূপকথা নামে সার্চ করলেই তাকে পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রায় দু’হাজার নির্ভুল ইংরেজি শব্দ জানা আছে তার। রূপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা জানালেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বসে পড়বে কম্পিউটারে। এখন সে দিনের ১২ ঘণ্টা সময় কাটায় কম্পিউটারের সঙ্গে। তার মা অবাক করে দিয়ে জানালেন, এতকিছুর জন্য তার কোনো স্কুল কিংবা প্রশিক্ষক ছিল না কোনোদিন, এখনও নেই, যা শিখেছে সব রূপকথা নিজে নিজেই শিখেছে।
ভার্চুয়াল পিসি দিয়ে চলছে গবেষণা
কম্পিউটার নিয়ে এখানেই রূপকথার শেষ নয়। রূপকথার মা জানালেন, বর্তমানে রূপকথা কম্পিউটার নিয়ে রীতিমত গবেষণা করছে। গত ৬ মাস ধরে সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল পিসি দিয়ে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে।
খেলনা নিয়ে যখন অন্য শিশুদের প্রহর কাটছে, রূপকথা তখন বিরামহীনভাবে কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলছে। মাঝে মাঝে তার কম্পিউটারকে রি-ফরমেট করতে হয়। সেটআপ সে নিজেই দেয়। শুধু উইন্ডোজ সেটআপ নয়, ভিসতা ও ওরাকল সেটআপও সে করতে পারে! ডিস্ক ক্লিনআপ ও ডিফ্রাগমেন্টেশন করে নিয়মিত। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রতিদিন সে ভাইরাস স্ক্যানও করে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের ডেট এক্সপায়ার করলে নিজেই ইন্টারনেট থেকে আপডেটেড ভার্সনটি ডাউনলোড করে নেয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বীকৃতি
এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৭ বছরের শিশু এই রূপকথাকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোড়ন উঠেছে। তাকে নিয়ে সংবাদ, প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে বিবিসি, নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, এস্ট্রেট নিউজ, চিলড্রেন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে।
রূপকথার কিছু ভিডিও লিঙ্ক
অসম্ভব প্রতিভাধর রূপকথাকে পাওয়া যাবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে। রূপকথার কাজ নিয়ে ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে রয়েছে বেশকিছু ভিডিও ক্লিপিংসের লিঙ্কস। এগুলোর কোনোটিতে দেখা যাচ্ছে সে অনেক দ্রুত টাইপ করছে। আবার কোনোটিতে প্রোগ্রামিং বা গেমস নিয়ে কাজ করছে। এমন কিছু ভিডিও লিঙ্কসের ঠিকানা হলো—
http://www.dailymotion.com/video/xg3lzq_roopkotha-wonder-baby-in-cyber-world_tech
http://www.youtube.com/watch?v=tloKr4D8348&feature=autoshare
http://www.youtube.com/watch?v=1ndSnw6CBZQ&feature=autoshare
রূপকথার রয়েছে ফেসবুক ঠিকানা, আর তা হলো—
http://www.facebook.com/profile.php?id=100000454476401
জয় করবে বিশ্ব
ব্যবসায়ী বাবা ওয়াসিম ফারহান ও মা সিনথিয়া ফারহিনের স্বপ্ন তাদের সন্তান রূপকথা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন যুগের সূচনা করবে। আমাদেরও প্রত্যাশা—বাংলাদেশের ‘রূপকথা’ তার অদম্য প্রতিভা দিয়ে জয় করবে বিশ্ব, যার যাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে তার জ্ঞানের বিচ্ছুরণ নবদিগন্তের সূচনা করবে, যা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক অনেক গর্বের একটা বিষয়।
http://allearninginformationbd.blogspot.com/
No comments:
Post a Comment